পোষা টিয়াটা প্রথমে খুব মজা পেয়েছিল যখন প্রথম ঘরবন্দি হলাম, আমিও অনেকদিনের ছুটি পেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম, যেমন পেতাম পরীক্ষার পর স্কুল ছুটি পড়ে গেলে।
তখন বুঝিনি।
প্রতিদিন টিয়া এক প্রশ্ন করত, “কেমন লাগছে?”
আমিও বেশ সময়টাকে কাটিয়ে কাটিয়ে আলস্যে আনন্দের ভাব দেখাই। টিয়া চুপ করে থাকে আপনমনে। আমি ডুবে যাই আরো অকাজে অফুরন্ত সময় উড়িয়ে দিতে।
তখন বুঝিনি।
একদিন যেন মনে হলো একটু বেরিয়ে আসি। কিন্তু সে তো সম্ভব নয়। আমাকে থাকতে হবে এই ঘরেই, অনির্দিষ্টকাল। বাইরে হাওয়া বিষাক্ত। তার উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা! ধূপ করে বসে পড়ি মেঝেয়। ছাদটা যেন খুব নিচু লাগে, উঠলেই মনে হয় মাথা ঠেকে যাবে! দেওয়ালগুলো কি আরো কাছে সরে আসছে! নাহ, ঘর তো আরো বড়ো ছিল! একি! আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে মেঝে! ঠিক দেখছি তো! আরে, চশমাটা কোথায় গেল! খাঁচা নিয়ে টিয়াটাও আমার দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে! একি! টিয়াটা কাছে এসে খাঁচাটা খুলে দিলো! আমার পিছনের দেওয়ালটা যেন ঠেলে একরকম জোর করে ঢুকিয়ে দিল আমাকে খাঁচার মধ্যে। তখনই দেওয়ালগুলো থেমে গেল! খাঁচার দরজাটা আমি চাইলেই খুলতে পারি, কিন্তু বাইরে বেরোবার জায়গা নেই! আমি কি করব ভেবে পাই না! খাঁচাটা আমি দুহাতে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলতে পারি কিন্তু ঘরটা তো খাঁচার মাপেই! মনে পড়ে যায় লিফ্টে আটকে পড়া!
ভয়ে অসহায়তায় ঘামতে থাকি! শ্বাস নিতে কষ্ট হয়! অক্সিজেন কমে আসছে বুঝতে পারি! সব লাটে হয়ে আসছে! টিয়াটাকে সাদাকালো মনে হয়! দম বন্ধ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে।
এমন সময় হঠাত্ টিয়া কি মনে করে আমাকে ঠোকরাতে থাকে! অল্প আঘাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়! ধড়ফড় করে উঠে বসি। বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! ঠিক সেই সময় টিয়া বলে ওঠে “কেমন লাগছে?” সদ্য দুঃস্বপ্নের ধাক্কায় তখনো হৃদস্পন্দন কমেনি। ধীরে ধীরে উঠে যাই খাঁচার কাছে। টিয়া অবাক হয়ে দেখতে থাকে।
খুলে দিই দরজা!
টিয়া প্রথমে হতভম্ব হয়ে যায়। তারপর বেরিয়ে এসে জানলায় বসে।
“খাঁচায় আনন্দে ছুটি কাটাও” বলে উড়ে যায় দূর আকাশে।
আমি বসে থাকি শূন্য খাঁচার বাইরে ও ভিতরে!
No comments:
Post a Comment