Thursday 23 April 2020

সকালের সোনালী রোদ্দুর

এক
বাস স্ট্যান্ড

Bus Stop Painting at PaintingValley.com | Explore collection of ...by PaintingValley.com

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় বুধবারে কাজের চাপটা একটু বেশিই ছিল। তাই সব কাজ শেষ করে বেরোতে কখন যে সাড়ে-সাতটা বেজে গেছে জয় সেটা ভালোরকম বুঝতে পারলো যখন ছ’তলার অফিস থেকে সে নিচে এসে বাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করল। শীতটা কিছু দিন থেকেই যাব যাব করছে, কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে হাল্কা ঠাণ্ডা হাওয়া দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানাচ্ছে। জয় তাই ব্যাগ থেকে ওভারকোটটা বের করে পড়ে নিল। একটা সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখন সে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাল তখন দেখল যে একটি বাস বেরিয়ে গেল। এখন কখন সেই বাস আসবে তার জন্য অপেক্ষা করে  কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সেই ভাবতে ভাবতে তার হঠাৎ মনে পড়ে গেল আজকের দিনটা। সকাল সকাল তাড়াতাড়ি উঠে কোনরকমে কিছু খেয়ে  দৌড়ে দৌড়ে  বাস ধরে দশটার মধ্যে অফিস যাওয়া, তারপর সারাদিন হাজারো লোকের অভাব-অভিযোগ সামলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সাড়ে আটটা তো বেজে যায়। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে তার পাশে তার থেকে একটু বয়সে বড় বলে মনে হয় একজন এসে দাঁড়িয়েছে সে খেয়াল করেনি। সেও হয়তো  অফিস থেকে ফিরছে সারাদিন কাজের শেষে।  লোকটা পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে  ধরাতে যাবে,  কিন্তু  মুখ থেকে “ধ্যাত” আওয়াজ শুনে  জয় বুঝতে পারল বেচারী দেশলাই  অফিসে ফেলে  এসেছে। এরকম বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা জয়ের আগেও আছে।  তাই সে নিজের করে তাকে  বলল, “এই যে!” লোকটিও তাড়াতাড়ি নিয়ে সিগারেট ধরালো এবং একটি  সুখ টান দিয়ে দেশলাই  ফেরত দিয়ে  বলল “ধন্যবাদ! একটা হবে নাকি?”  বলে একটি সিগারেট এগিয়ে দিল জয়ের দিকে। “আপনাকে  এখানে আগে দেখেছি বলে তো মনে হয় না,  অবশ্য  কলকাতা শহরটি ছোট তো নয়।”
-  হ্যাঁ আমি  অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছি। আজকাল বাস কি কম চলছে?
-  তা একরকম বলতে পারেন। ওলা উবের এর দৌরাত্ম্যে  পাবলিক বাস কিছুটা হলেও কমে গেছে। আপনি যাবেন কোথায় যদি না কিছু অসুবিধা থাকে বলতে পারেন।
- তেমন কোথাও না,  আমার এক বন্ধুর  বাড়ি, বোসপুকুরে। অনেকদিন পর দেখা হবে।
- আমার বাড়িও তো ওই দিকেই,  আনন্দপুর।   চলুন তাহলে একই বাসে যাওয়া যাবে।
-  তাই নাকি,  বেশ।
কথা বলতে বলতে বেশ অনেকক্ষণ কেটে গেছে। এদিকে সাড়ে আটটা বাজতে চলল,  কোন বাসের দেখা নেই। শেষে জয় অধৈর্য হয়ে বলল-  তাহলে  আমি  একটা  ক্যাব বুক করি।
- সেই ভালো হয়,  এইভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়।
-  এইতো পাশেই একজন আছে, একসেপ্ট করে নিয়েছে।


সৌম কে বোসপুকুরে নামিয়ে দিয়ে জয়ের বাড়ি ফিরতে ফিরতে  প্রায় সাড়ে ন’টা বেজে গেছে।  গাড়িতে কথায় কথায় জানতে পারল, সৌমের বাড়ি আলিপুরে। কলকাতার একটি কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর  ব্যাঙ্গালোর চলে যায় একটা ভালো অফার পেয়ে। মাঝে দু-একবার  এলেও,  দীর্ঘ ছয় বছর সে বাইরেই  কাটিয়েছে। রিসেন্টলি একটা পারিবারিক সমস্যায় পড়ে তাকে শেষ পর্যন্ত চাকরি ছেড়ে আসতে হয় কলকাতায় নিজের বাড়িতে। অবশ্যই এখানেও সে একটি চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে  আসার আগেই। রিফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে আরাম করে বসে জয় এক কাপ চা নিয়ে টিভিটা চালাল।  সারাদিন  যা ঝক্কি গেল! ফোনটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল একটা আননোন নাম্বার থেকে  “রিচড, থ্যাংকস!”  মেসেজ। জয় বুঝতে পারল কে পাঠিয়েছে। একটা “ওয়েলকাম” পাঠিয়ে দিয়ে জয় সারাদিনের ক্লান্তি একটা নতুন ওয়েব সিরিজের মধ্যে মিলিয়ে  দিতে লাগলো।

No comments:

Post a Comment